দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ICT আজ আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে।
আগে কোনো খবর এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছাতে অনেক সময় লাগত, এখন মাত্র কয়েক
সেকেন্ডেই পৃথিবীর যেকোনো স্থানে তথ্য পাঠানো সম্ভব। ICT ব্যবহারের কারণে আমাদের
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা, কৃষি এবং বিনোদন সব ক্ষেত্রেই বড় পরিবর্তন
এসেছে। বাংলাদেশেও ICT এর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে।
ICTএর মাধ্যমে মানুষ ঘরে বসেই আয় করতে পারছে এবং দেশের অর্থনীতিও এগিয়ে যাচ্ছে।
তাই ICT শুধু ব্যক্তিগত জীবনেই নয়, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নেও বড় ভূমিকা রাখছে।
এই আর্টিকেলে আমরা জানব, কীভাবে ICT আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে বদলে দিচ্ছে এবং কেন
এটি ভবিষ্যতের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ।
পেজ সূচিপত্রঃ দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
- দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব
- শিক্ষা খাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
- স্বাস্থ্যসেবায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রভাব
- ব্যবসা ও বাণিজ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
- কৃষিক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রয়োগ
- যোগাযোগ ব্যবস্থায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
- বিনোদন জগতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
- গৃহস্থালি কাজে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রভাব
- দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
- দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার/শেষ কথা
দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ICT আজ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে
দাঁড়িয়েছে। আগে যেখানে খবর পৌঁছাতে অনেক সময় লাগত, এখন কয়েক সেকেন্ডেই মোবাইল
বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা তথ্য পেয়ে যাই। মানুষের কাজকর্ম, জীবনযাত্রা,
এমনকি চিন্তাভাবনার ধরনও বদলে দিয়েছে ICT। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে
বন্ধু,পরিবার, সহকর্মীর সাথে দূরত্ব আর বাধা নয়।
প্রথমত ICT আমাদের জীবনে সময়ের সাশ্রয় করছে। আগে ব্যাংকে গিয়ে লাইনে
দাঁড়াতে হতো, এখন মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ থেকে ঘরে বসেই টাকা পাঠানো বা বিল
পরিশোধ করা যায়। অফিসের কাজেও একই সুবিধা। অনলাইনে মিটিং, ইমেইল, ক্লাউড
স্টোরেজ সবকিছু এখন হাতের মুঠোয়। ICT যোগাযোগকে সহজ করেছে। পৃথিবীর এক
প্রান্তে থাকা মানুষও আজ ভিডিও কলে মুহূর্তের মধ্যেই কথা বলতে পারছে।
দ্বিতীয়ত ICT আমাদের পড়াশোনা ও জ্ঞান অর্জনের সুযোগ অনেক বাড়িয়ে
দিয়েছে। আগে গ্রামের শিক্ষার্থীরা ভালো শিক্ষা থেকে অনেকটা দূরে ছিল,
কিন্তু এখন অনলাইনে ক্লাস, বই বা টিউটোরিয়াল দেখে সহজেই শিখতে পারছে। ICT
কর্মসংস্থানের নতুন পথ খুলে দিয়েছে। ফ্রিল্যান্সিং, ডিজিটাল মার্কেটিং,
সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, কন্টেন্ট ক্রিয়েশনসহ অসংখ্য চাকরির সুযোগ তৈরি
হয়েছে।
সবশেষে বলা যায়, দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এতটাই
গুরুত্বপূর্ণ যে, এটি ছাড়া আধুনিক জীবন কল্পনা করাই কঠিন। এতে তরুণ প্রজন্ম যেমন উপকৃত হচ্ছে, তেমনি দেশের অর্থনীতিও এগিয়ে যাচ্ছে।
ICT এখন শুধু একটি প্রযুক্তি নয়, বরং মানুষের উন্নতি ও অগ্রগতির প্রধান
সহায়ক হয়ে উঠেছে।
শিক্ষা খাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
শিক্ষা মানুষের জীবনের অন্যতম ভিত্তি। আগে শিক্ষা বলতে বোঝাতো বই,
খাতা আর ব্ল্যাকবোর্ড। কিন্তু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ICT আসার পর
শিক্ষা খাতে এসেছে বিশাল পরিবর্তন। এখন শিক্ষা আরও সহজ, আধুনিক এবং
সবার জন্য উন্মুক্ত হয়ে গেছে।
আরো পড়ুনঃ উচ্চ রক্তচাপ কমানোর প্রাকৃতিক উপায়
প্রথমত, ICT শিক্ষা খাতে ডিজিটাল ক্লাসরুম তৈরি করেছে। অনেক
স্কুল-কলেজে এখন প্রজেক্টর, কম্পিউটার, স্মার্ট বোর্ড ব্যবহার করা
হচ্ছে। এতে শিক্ষকরা সহজে পড়াতে পারছেন এবং শিক্ষার্থীরাও চিত্র,
ভিডিও দেখে বিষয়গুলো ভালোভাবে বুঝতে পারছে। ICT শিক্ষার্থীদের জন্য
অনলাইন লার্নিং এর সুযোগ এনে দিয়েছে। ইউটিউব, গুগল ক্লাসরুম,
কোরসেরা, উডেমির মতো প্ল্যাটফর্ম থেকে হাজারো শিক্ষার্থী নতুন বিষয়
শিখছে। গ্রামের এক শিক্ষার্থীও আজ শহরের নামকরা শিক্ষকের ভিডিও দেখে
পড়তে পারছে।
দ্বিতীয়, ICT তথ্য ভান্ডারকে সবার জন্য উন্মুক্ত করেছে। আগে
লাইব্রেরিতে গিয়ে বই খুঁজতে হতো, এখন কয়েক সেকেন্ডে গুগল সার্চ বা
অনলাইন লাইব্রেরি থেকে যেকোনো তথ্য পাওয়া যায়। এতে পড়াশোনার মান আরও
উন্নত হয়েছে। ICT শিক্ষক শিক্ষার্থীর যোগাযোগকে সহজ করেছে। অনলাইনে
গ্রুপ ক্লাস, হোয়াটসঅ্যাপ বা মেসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে প্রশ্ন করা
বা আলোচনা করা যায়। এতে পড়াশোনার মান আরও বাড়ছে।
তৃতীয়, ICT প্রতিবন্ধী ও পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্যও সুযোগ
সৃষ্টি করেছে। বিশেষ সফটওয়্যার ও অ্যাপ ব্যবহার করে তারা সহজে
পড়াশোনা করতে পারছে।সবমিলিয়ে, শিক্ষা খাতে তথ্য ও যোগাযোগ
প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিক, কার্যকর এবং সবার
জন্য সহজলভ্য করে তুলেছে। ভবিষ্যতে ICT শিক্ষা খাতকে
আরও উন্নত করে তুলবে, যেখানে প্রত্যেক শিক্ষার্থী সমান সুযোগ পাবে।
স্বাস্থ্যসেবায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রভাব
স্বাস্থ্য মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। আগে চিকিৎসা
সেবা পেতে অনেক সময় ও কষ্ট হতো। কিন্তু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
ICT আসার পর স্বাস্থ্য খাত অনেক সহজ, দ্রুত এবং আধুনিক হয়ে উঠেছে।
আজকে একজন সাধারণ মানুষও প্রযুক্তির সাহায্যে দ্রুত চিকিৎসা
পাচ্ছে।
প্রথমত ICT স্বাস্থ্যসেবাকে ডিজিটাল ও সহজলভ্য করেছে। এখন
টেলিমেডিসিন সার্ভিসের মাধ্যমে ঘরে বসেই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া
যায়। গ্রামের মানুষ শহরে না গিয়েও মোবাইল ফোন বা ভিডিও কলে
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সাথে কথা বলে চিকিৎসা পাচ্ছে। ICT ডিজিটাল
স্বাস্থ্য রেকর্ড তৈরি করেছে। আগে রোগীর ইতিহাস কাগজে লিখে রাখতে
হতো, যেটা অনেক সময় হারিয়ে যেত। এখন কম্পিউটার বা অনলাইন
সিস্টেমে রোগীর সব রিপোর্ট, প্রেসক্রিপশন ও পরীক্ষা নিরীক্ষা
সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এতে রোগীর পুরনো তথ্য সহজে পাওয়া যায় এবং
ডাক্তার সঠিক চিকিৎসা দিতে পারেন।
দ্বিতীয় ICT স্বাস্থ্যখাতে দ্রুত রোগ নির্ণয়ের সুযোগ তৈরি করেছে।
আধুনিক যন্ত্রপাতি, স্ক্যান মেশিন,অনলাইন ল্যাব রিপোর্টের কারণে
ডাক্তাররা দ্রুত রোগ শনাক্ত করতে পারছেন। এর ফলে রোগীরা সময়মতো
চিকিৎসা শুরু করতে পারছে। ICT সচেতনতা বৃদ্ধি করছে। সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রচারণা, টিকা কার্যক্রম, রোগ
প্রতিরোধের উপায় ইত্যাদি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। ফলে
মানুষ আরও সচেতন হচ্ছে।
তৃতীয় ICT স্বাস্থ্যখাতে জরুরি সেবা উন্নত করেছে। অ্যাম্বুলেন্স
সার্ভিস, হেলথ হটলাইন নম্বর, অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং
ইত্যাদি মানুষের জীবনকে অনেক সহজ করেছে। সবমিলিয়ে, স্বাস্থ্যসেবায়
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রভাব আমাদের জীবনে বিশাল পরিবর্তন
এনেছে। এখন মানুষ সহজে, কম খরচে এবং দ্রুত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে।
ভবিষ্যতে ICT স্বাস্থ্যখাতকে আরও উন্নত করে দেশের প্রতিটি মানুষের
কাছে মানসম্মত সেবা পৌঁছে দেবে।
ব্যবসা ও বাণিজ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
ব্যবসা ও বাণিজ্য সবসময়ই মানুষের জীবনের একটি বড় অংশ। আগে ব্যবসা
পরিচালনা করতে হলে দোকানে গিয়ে সরাসরি লেনদেন করতে হতো। কিন্তু
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ICT আসার পর ব্যবসা খাতে এসেছে বিশাল
পরিবর্তন। আজকে ছোট দোকান থেকে শুরু করে বড় কোম্পানি সবাই ICT
ব্যবহার করছে।
প্রথমত ICT অনলাইন ব্যবসাকে জনপ্রিয় করেছে। এখন মানুষ ঘরে বসেই
মোবাইল বা কম্পিউটার দিয়ে কেনাকাটা করছে। ই কমার্স প্ল্যাটফর্ম
যেমন দারাজ, আজকেরডিল বা ফেসবুক শপিং গ্রুপগুলো ICT এর কারণে
জনপ্রিয় হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা সহজে গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে
পারছে। ICT অনলাইন লেনদেনকে সহজ করেছে। আগে ব্যাংকে গিয়ে টাকা জমা
বা তোলা লাগতো, এখন বিকাশ, নগদ, রকেটের মতো মোবাইল ব্যাংকিং
অ্যাপের মাধ্যমে মুহূর্তেই টাকা পাঠানো যায়। এতে ব্যবসা আরও দ্রুত
হচ্ছে।
দ্বিতীয় ICT ব্যবসায় ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সুযোগ তৈরি করেছে। আগে
বিজ্ঞাপন দিতে হলে পত্রিকা বা টেলিভিশনের ওপর নির্ভর করতে হতো। এখন
ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল অ্যাডসের মাধ্যমে যে কোনো ব্যবসা স্বল্প খরচে
কোটি কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। ICT ব্যবসার কার্যক্রমকে
আধুনিক করেছে। অনলাইন সফটওয়্যার,অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম, স্টক
ম্যানেজমেন্ট টুলস ব্যবহার করে ব্যবসা আরও সহজে পরিচালনা করা যায়।
বড় বড় কোম্পানির মতো ছোট ব্যবসায়ীরাও এখন এসব টুল ব্যবহার
করছে।
তৃতীয় ICT চাকরির নতুন সুযোগ তৈরি করেছে। গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব
ডেভেলপমেন্ট, কনটেন্ট রাইটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং এসব নতুন পেশা ICT
এর কল্যাণে গড়ে উঠেছে। এতে তরুণরা ঘরে বসেই আয় করছে এবং দেশের
অর্থনীতিও এগিয়ে যাচ্ছে। সবশেষে বলা যায়, ব্যবসা ও বাণিজ্যে তথ্য
ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের জীবনকে সহজ করেছে এবং নতুন
দিগন্ত খুলে দিয়েছে। ICT ছাড়া আজকের দিনে আধুনিক ব্যবসা কল্পনাই
করা যায় না।
কৃষিক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রয়োগ
বাংলাদেশ একটি কৃষিভিত্তিক দেশ। দেশের অধিকাংশ মানুষ কৃষির উপর
নির্ভরশীল। আগে কৃষকরা চাষাবাদের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর
করত, কিন্তু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ICT আসার পর কৃষি খাতে এসেছে
বিশাল পরিবর্তন। ICT এখন কৃষকদের জীবনকে সহজ করেছে এবং উৎপাদনশীলতা
বাড়িয়েছে।
প্রথমত, ICT কৃষকদের জন্য আধুনিক তথ্য পাওয়ার সুযোগ তৈরি করেছে।
কৃষকরা এখন মোবাইল ফোন, টেলিভিশন, রেডিও এবং ইন্টারনেট থেকে সহজেই
আবহাওয়া, চাষাবাদ পদ্ধতি, সার ব্যবহারের নিয়ম ইত্যাদি জানতে
পারছে। এতে তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে। ICT বাজার ব্যবস্থাকে
উন্নত করেছে। আগে কৃষকরা কোথায় তাদের ফসল ভালো দামে বিক্রি করবে
তা বুঝতে পারত না। এখন বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও মোবাইল
অ্যাপের মাধ্যমে কৃষকরা বাজারদর সম্পর্কে জানে এবং সঠিক জায়গায়
ফসল বিক্রি করতে পারে।
দ্বিতীয় ICT ফসল উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি,
স্মার্ট সেচ ব্যবস্থা, ড্রোন প্রযুক্তি ও স্যাটেলাইট ডেটা কৃষকদের
উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করছে। এর ফলে কম সময়ে বেশি ফসল
উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। ICT কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নকে এগিয়ে
নিয়েছে। অনলাইনে নতুন প্রযুক্তি ও কৃষি সম্পর্কিত গবেষণার ফলাফল
কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এতে কৃষকরা নতুন ফসলের জাত, রোগ
প্রতিরোধের উপায় ও আধুনিক কৃষি পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে
পারছে।
আরো পড়ুনঃ ফজরের নামাজের বৈজ্ঞানিক উপকারিতা
তৃতীয় ICT কৃষকদের আয়ের সুযোগ বাড়িয়েছে। ই কমার্স
প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কৃষকরা সরাসরি ভোক্তাদের কাছে ফসল বিক্রি
করছে। এতে মধ্যস্বত্বভোগী কমে যাচ্ছে এবং কৃষকরা ন্যায্য দাম
পাচ্ছে। সবশেষে বলা যায়, কৃষিক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির
প্রয়োগ কৃষি খাতকে আধুনিক, লাভজনক ও টেকসই করেছে। ভবিষ্যতে ICT
কৃষিকে আরও উন্নত করবে এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ গড়তে
বড় ভূমিকা রাখবে।
যোগাযোগ ব্যবস্থায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
যোগাযোগ মানুষের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আগে চিঠি বা বার্তা
পৌঁছাতে অনেক সময় লাগত, কিন্তু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ICT
যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটিয়েছে। আজকের দিনে পৃথিবীর এক
প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে মুহূর্তের মধ্যে কথা বলা বা বার্তা
পাঠানো সম্ভব হয়েছে।
প্রথমত ICT টেলিযোগাযোগকে সহজ করেছে। মোবাইল ফোন এখন সবার হাতে
হাতে। ফোন কল, এসএমএস কিংবা ভিডিও কলের মাধ্যমে কয়েক সেকেন্ডেই
দূরের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। এতে সময় ও খরচ দুটোই
কমেছে। ICT ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগকে জনপ্রিয় করেছে। ফেসবুক,
হোয়াটসঅ্যাপ, ইমেইল, মেসেঞ্জার, জুম ইত্যাদি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার
করে মানুষ কাজের কথা, পড়াশোনা কিংবা ব্যক্তিগত আলাপচারিতা করছে।
বিশেষ করে করোনা মহামারির সময় অনলাইন যোগাযোগের গুরুত্ব আরও বেশি
বোঝা গেছে।
দ্বিতীয়ত ICT যোগাযোগে গতি ও কার্যকারিতা এনেছে। আগে একটি চিঠি
পৌঁছাতে কয়েক দিন লাগত, এখন মাত্র কয়েক সেকেন্ডে হাজার মাইল দূরে
ইমেইল পাঠানো যায়। এতে ব্যবসা, শিক্ষা এবং ব্যক্তিগত জীবনে সময়
বাঁচছে। ICT ভিডিও কনফারেন্সিং এর সুযোগ দিয়েছে। অফিস মিটিং,
অনলাইন ক্লাস, আন্তর্জাতিক সম্মেলন সবকিছু এখন অনলাইনে করা যায়।
এতে ভ্রমণের খরচ কমেছে এবং বিশ্ব আরও কাছাকাছি এসেছে ।
তৃতীয় ICT সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রসার ঘটিয়েছে। ফেসবুক,
টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবের মাধ্যমে মানুষ নিজেদের মতামত প্রকাশ
করছে, খবর শেয়ার করছে এবং নতুন সম্পর্ক তৈরি করছে। তবে এর
পাশাপাশি সচেতনভাবে ব্যবহার করারও প্রয়োজন রয়েছে। সবমিলিয়ে,
যোগাযোগ ব্যবস্থায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের
জীবনকে অনেক সহজ ও গতিশীল করেছে। এখন যোগাযোগ শুধু দ্রুত নয়, বরং
সবার জন্য সহজলভ্য এবং আধুনিক হয়েছে।
বিনোদন জগতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
মানুষেরজীবনে বিনোদন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগে বিনোদনের মাধ্যম ছিল
নাটক, সিনেমা হল, গান শোনা বা বই পড়া। কিন্তু তথ্য ও যোগাযোগ
প্রযুক্তি ICT আসার পর বিনোদনের জগৎ পুরোপুরি বদলে গেছে। এখন
বিনোদন আরও সহজলভ্য, আধুনিক এবং বৈচিত্র্যময় হয়েছে।
প্রথমত ICT ডিজিটাল বিনোদনের দরজা খুলে দিয়েছে। আগে সিনেমা দেখতে
হলে হলে যেতে হতো, গান শুনতে হলে ক্যাসেট বা সিডির প্রয়োজন হতো।
এখন ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, স্পটিফাই, ফেসবুক ভিডিও বা অন্যান্য অ্যাপ
ব্যবহার করে সহজেই সিনেমা, গান, নাটক বা বিভিন্ন শো দেখা যায়। ICT
ভিডিও গেম ও মোবাইল গেমিংকে জনপ্রিয় করেছে। আগে শিশু-কিশোরদের
খেলাধুলা মানেই মাঠে গিয়ে খেলা, কিন্তু এখন তারা অনলাইনে বা
মোবাইল অ্যাপে বিভিন্ন গেম খেলছে। গেম এখন শুধু বিনোদন নয়, বরং
অনেকের জন্য পেশাও হয়ে উঠেছে।
দ্বিতীয়ত ICT সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিনোদনের সুযোগ তৈরি করেছে।
ফেসবুক, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম বা ইউটিউব শর্টসের মাধ্যমে মানুষ মজার
ভিডিও বানাচ্ছে এবং অন্যদের সাথে শেয়ার করছে। এতে শুধু বিনোদন
নয়, অনেকের জন্য আয়ের পথও তৈরি হয়েছে। ICT লাইভ স্ট্রিমিং এবং
অনলাইন ইভেন্টকে সহজ করেছে। এখন মানুষ বাড়িতে বসেই কনসার্ট,
খেলাধুলা বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান লাইভ দেখতে পারছে। এর ফলে দূরের
অনুষ্ঠানও হাতের নাগালে চলে এসেছে।
ICT কনটেন্ট ক্রিয়েটরের নতুন যুগ সৃষ্টি করেছে। আগে কেউ জনপ্রিয়
হতে চাইলে টিভি বা সিনেমার ওপর নির্ভর করতে হতো। এখন যে কেউ ইউটিউব
চ্যানেল খুলে বা ফেসবুক পেজ বানিয়ে নিজের প্রতিভা সবার সামনে তুলে
ধরতে পারছে। সবশেষে বলা যায়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
বিনোদনের জগৎকে অনেক বেশি সহজ ও উপভোগ্য করেছে। আগে যেখানে বিনোদন
শুধু শহরে সীমাবদ্ধ ছিল, এখন তা সহজেই গ্রামাঞ্চলেও পৌঁছে যাচ্ছে।
ICT মানুষকে গান, সিনেমা, গেমস এবং নানা ধরণের বিনোদনের নতুন সুযোগ
এনে দিয়েছে।
গৃহস্থালি কাজে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রভাব
গৃহস্থালি কাজ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আগে এসব
কাজ করতে অনেক সময়, শ্রম এবং কষ্ট হতো। কিন্তু তথ্য ও যোগাযোগ
প্রযুক্তি ICT আসার পর ঘরের কাজ অনেক সহজ ও দ্রুত হয়েছে। আধুনিক
প্রযুক্তি এখন আমাদের ঘরকে স্মার্ট করে তুলছে।
প্রথমত ICT স্মার্ট হোম সিস্টেম চালু করেছে। এখন মোবাইল ফোন বা
ভয়েস কমান্ডের মাধ্যমে বাতি, ফ্যান, এসি, টিভি কিংবা দরজা-জানালা
নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এতে ঘরের কাজ আরও সহজ হয়েছে এবং সময়
বাঁচছে। ICT গৃহস্থালি যন্ত্রপাতিকে উন্নত করেছে। আগে কাপড় ধোয়া,
রান্না করা বা ঘর পরিষ্কার করতে অনেক সময় লাগত। এখন ওয়াশিং
মেশিন, মাইক্রোওয়েভ, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বা রোবট ক্লিনার এসব কাজ
স্বয়ংক্রিয়ভাবে করে দিচ্ছে। ফলে মানুষের কষ্ট কমেছে।
দ্বিতীয়ত ICT অনলাইন কেনাকাটার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বাজারে
না গিয়েই এখন মোবাইল ফোন থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস অর্ডার করা
যায়। অনলাইনে গ্রোসারি শপিং, খাবার অর্ডার কিংবা ওষুধ কেনা এখন
সবার জন্য সহজ হয়েছে। ICT গৃহস্থালি নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত
করেছে। সিসি ক্যামেরা, স্মার্ট ডোর লক, অ্যালার্ম সিস্টেমের
মাধ্যমে ঘরের নিরাপত্তা অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে। বাইরে থেকেও
মোবাইল দিয়ে ঘরের নিরাপত্তা দেখা যায়।
তৃতীয়ত ICT পরিবারের সদস্যদের যোগাযোগ সহজ করেছে। কেউ বিদেশে
থাকলেও ভিডিও কল, হোয়াটসঅ্যাপ বা মেসেঞ্জারের মাধ্যমে সহজে কথা
বলা যায়। ফলে পারিবারিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হচ্ছে। সবশেষে বলা যায়,
গৃহস্থালি কাজে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রভাব আমাদের জীবনকে
অনেক আরামদায়ক ও সুবিধাজনক করেছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং স্মার্ট
প্রযুক্তির কারণে ঘরের কাজ এখন আর কষ্টসাধ্য নয়, বরং আনন্দদায়ক
হয়ে উঠেছে।
দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ICT আমাদের জীবনে ইতিমধ্যেই বড় পরিবর্তন
এনেছে। তবে এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা আরও বিস্তৃত। প্রতিদিন নতুন নতুন
প্রযুক্তি আবিষ্কার হচ্ছে, যা আগামী দিনে মানুষের জীবনকে আরও সহজ,
উন্নত এবং কার্যকর করে তুলবে।
প্রথমত, ভবিষ্যতে ICT স্মার্ট জীবনের পথ তৈরি করবে। স্মার্ট হোম,
স্মার্ট সিটি এবং স্মার্ট ডিভাইসগুলো মানুষের দৈনন্দিন কাজকে আরও
সহজ করে তুলবে। মোবাইল ফোন বা ভয়েস কমান্ডেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ
করা যাবে। ICT কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা AI ও রোবট প্রযুক্তিকে আরও
উন্নত করবে। ভবিষ্যতে অনেক গৃহস্থালি কাজ, অফিসের কাজ এমনকি
স্বাস্থ্যসেবা পর্যন্ত রোবট ও AI দ্বারা পরিচালিত হতে পারে। এতে
মানুষের সময় ও শ্রম বাঁচবে।
দ্বিতীয়ত ICT শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে আরও পরিবর্তন আনবে। অনলাইন
শিক্ষা আরও উন্নত হবে, ভার্চুয়াল ক্লাসরুম সাধারণ ব্যাপার হয়ে
যাবে। একইভাবে স্বাস্থ্যখাতে টেলিমেডিসিন আরও জনপ্রিয় হবে এবং রোগ
নির্ণয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি বড় ভূমিকা রাখবে। ICT চাকরির নতুন
ক্ষেত্র তৈরি করবে। ভবিষ্যতে ডিজিটাল মার্কেটিং, সফটওয়্যার
ডেভেলপমেন্ট, সাইবার সিকিউরিটি, ব্লকচেইন প্রযুক্তি, AI এবং মেশিন
লার্নিং-এর মতো খাতে প্রচুর চাকরির সুযোগ তৈরি হবে।
তৃতীয় ICT আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে বড় ভূমিকা রাখছে।
সরকারের ভিশন ২০৪১ অনুযায়ী বাংলাদেশকে স্মার্ট ও আধুনিক দেশে
রূপান্তর করতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি হবে অন্যতম প্রধান
হাতিয়ার। সবশেষে বলা যায়, দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ
প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সীমাহীন। সঠিক ব্যবহার ও সচেতনতার
মাধ্যমে ICT আমাদের জীবনকে আরও সমৃদ্ধ, আধুনিক ও টেকসই করে তুলবে।
দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার/শেষ কথা
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ICT আজকের যুগে আমাদের জীবনকে অনেক সহজ ও
দ্রুত করেছে। পড়াশোনা, চিকিৎসা, ব্যবসা, কৃষিকাজ, যোগাযোগ ও
বিনোদনসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে এর বড় ভূমিকা রয়েছে। এর
মাধ্যমে সময় ও খরচ বাঁচানো যায়, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি
হয় এবং দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হয়। গ্রামে বা শহরে,
সর্বত্র মানুষ এখন এর সুবিধা পাচ্ছে। তবে এর সঠিক ব্যবহার জানা খুব
জরুরি, কারণ অপব্যবহার করলে ক্ষতিও হতে পারে। তাই সচেতনভাবে
ব্যবহার করলে ICT আমাদের ব্যক্তিগত উন্নয়নের পাশাপাশি স্মার্ট
বাংলাদেশ গড়ার পথে বড় শক্তি হিসেবে কাজ করবে।
আমার এই আর্টিকেলে দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির
ব্যবহার পড়ে যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান
মতামত জানাবেন এবং আমার এই আর্টিকেলটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার
করবেন।



বারী বিডি আইটি র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url