ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সুবিধা অসুবিধা

আমাদের এই আধুনিক জীবনে প্রযুক্তি প্রতিদিন নতুন চমক নিয়ে আসছে। আজকে যে প্রযুক্তি আমরা ব্যবহার করছি, হয়তো কালকে সেটা পুরনো হয়ে যাবে। ঠিক তেমনি কয়েক বছর আগে পর্যন্ত আমরা কেবল সিনেমায় বা কল্পকাহিনিতে ভার্চুয়াল জগত এর কথা শুনতাম। কিন্তু এখন সেই কল্পনা সত্যি হয়েছে। মানুষ আজ ঘরে বসেই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ঘুরে বেড়াতে পারে। আর সেই প্রযুক্তির নাম হলো ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা সংক্ষেপে VR 
ভার্চুয়াল-রিয়েলিটির-সুবিধা-অসুবিধা
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সুবিধা অসুবিধাঃ VR এমন এক অভিজ্ঞতা দেয়, যেখানে আপনি বাস্তব পৃথিবীতে না থেকেও মনে করবেন আপনি অন্য কোনো দুনিয়ায় আছেন। একটা হেডসেট চোখে পরলেই যেন আপনি সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে ঢুকে গেলেন। কেউ গেম খেলছেন, কেউ সিনেমা দেখছেন, আবার কেউ ইতিহাসের পাঠ নিচ্ছেন সব কিছুই একেবারে জীবন্ত মনে হবে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই প্রযুক্তি আমাদের জন্য কতটা ভালো? এর সুবিধা কতটা, আবার অসুবিধাই বা কোথায়? এই লেখায় আমরা খুব সহজ ভাষায় VR নিয়ে বিস্তারিত জানব।

পেজ সূচিপত্রঃ ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সুবিধা অসুবিধা

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR)  আসলে কি?

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি শব্দটা যদি ভেঙে দেখি তাহলে দুইটা অংশ পাওয়া যায় একটা হলো ভার্চুয়াল আরেকটা হলো রিয়েলিটি। ভার্চুয়াল মানে হলো কল্পিত, যেটা আসল নয় কিন্তু বাস্তবের মতো মনে হয়। আর রিয়েলিটি মানে হলো বাস্তবতা।
তাহলে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হলো এমন একটা প্রযুক্তি যা আপনাকে বাস্তবের মতো মনে হওয়া একটা কৃত্রিম দুনিয়ায় নিয়ে যাবে। 

এই অভিজ্ঞতা পাওয়ার জন্য সাধারণত VR হেডসেট ব্যবহার করা হয়। আপনি যখন হেডসেট চোখে পরবেন, তখন আপনার সামনে 3D ছবি ভেসে উঠবে। সেই ছবিগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যে মনে হবে আপনি সত্যি সত্যি অন্য কোথাও দাঁড়িয়ে আছেন।
শুধু দেখা নয়, অনেক হেডসেটে চারপাশের শব্দও শোনা যায়। আবার বিশেষ কন্ট্রোলার ব্যবহার করলে আপনি হাত নেড়ে ভার্চুয়াল দুনিয়ায় কাজও করতে পারেন। যেমন দরজা খোলা, কোনো জিনিস ধরা বা হাঁটা সবকিছুই ভার্চুয়াল জগতে সম্ভব।
 
এছাড়া, চিকিৎসা, ব্যবসা, সামরিক প্রশিক্ষণ এবং মহাকাশ গবেষণাতেও VR এর ব্যবহার বাড়ছে। ডাক্তাররা সার্জারির আগে VR এ অনুশীলন করেন, সেনারা যুদ্ধক্ষেত্রের ট্রেনিং নেন, আর নভোচারীরা মহাশূন্যের পরিবেশে ভার্চুয়ালি প্রস্তুতি নেন।
সহজভাবে বললে, VR হলো একটা ডিজিটাল ভ্রমণ, যেখানে আপনার শরীর বাস্তবে না গেলেও আপনার মন চলে যায় একেবারে নতুন জগতে।এছাড়া, চিকিৎসা, ব্যবসা, সামরিক প্রশিক্ষণ এবং মহাকাশ গবেষণাতেও VR এর ব্যবহার বাড়ছে। ডাক্তাররা সার্জারির আগে VR এ অনুশীলন করেন, সেনারা যুদ্ধক্ষেত্রের ট্রেনিং নেন, আর নভোচারীরা মহাশূন্যের পরিবেশে ভার্চুয়ালি প্রস্তুতি নেন।

VR কোথায় কোথায় ব্যবহার করা হয়?

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি শুধু গেম খেলার জন্য নয়, এর ব্যবহার অনেক বড় এবং বিস্তৃত।
প্রথমত, বিনোদনের জগতে VR খুব জনপ্রিয়। আগে যেখানে আমরা কেবল টিভি বা মোবাইল স্ক্রিনে গেম খেলতাম, এখন VR ব্যবহার করে সেই গেমের ভেতর ঢুকে পড়া যায়। এতে গেম অনেক বেশি বাস্তব মনে হয়। সিনেমা বা কনসার্টও VR এর মাধ্যমে দেখা যায়, যেন আপনি একেবারে সেই জায়গায় উপস্থিত আছেন।

দ্বিতীয়ত, শিক্ষাক্ষেত্রে VR ব্যবহার শুরু হয়েছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বা স্কুলে শিক্ষার্থীদের পড়ানোর জন্য VR ব্যবহার করা হয়। যেমন, ইতিহাসের ক্লাসে শিক্ষার্থীরা প্রাচীন সভ্যতার শহর ঘুরে দেখতে পারে, বা মেডিকেল ছাত্ররা অপারেশনের প্র্যাকটিস করতে পারে। এতে পড়াশোনা আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।

ভ্রমণে VR গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। যারা বিদেশে যেতে পারেন না, তারা VR ব্যবহার করে সেই জায়গার অভিজ্ঞতা নিতে পারেন। যেমন আইফেল টাওয়ার, মিশরের পিরামিড বা সমুদ্রের নিচের দুনিয়া ঘরে বসেই দেখা যায়।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সুবিধা

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি আমাদের বাস্তব জীবনের অনেক কাজকে সহজ, আকর্ষণীয় এবং নিরাপদ করে তুলছে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সুবিধা অসুবিধাঃ VR প্রথমত, বিনোদনের ক্ষেত্রে VR বিপ্লব এনেছে। গেম খেলার মজা অনেক গুণ বেড়ে গেছে। আগে যেখানে গেম শুধু স্ক্রিনে সীমাবদ্ধ ছিল, এখন খেলোয়াড় নিজেকে গেমের ভেতরে খুঁজে পান। একইভাবে, সিনেমা বা কনসার্ট VR এ দেখলে মনে হয় সত্যিই সেখানেই বসে আছি।
ভার্চুয়াল-রিয়েলিটির-সুবিধা-অসুবিধা
শিক্ষায় VR একটি অসাধারণ মাধ্যম। অনেক কঠিন বিষয় VR ব্যবহার করে সহজে শেখা যায়। যেমন, কোনো জটিল মেশিন কিভাবে কাজ করে তা বাস্তবে না দেখে VR এ দেখানো যায়। এতে শিক্ষার্থীরা শুধু তত্ত্ব নয়, বাস্তব অভিজ্ঞতাও পায়।

দ্বিতীয়ত চিকিৎসায় VR এর ব্যবহার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক চাপ, ভয় বা ফোবিয়া দূর করার জন্য অনেক দেশে থেরাপিতে VR ব্যবহার করা হয়। রোগীরা ভার্চুয়াল পরিবেশে ধীরে ধীরে তাদের ভয় কাটিয়ে উঠতে পারেন। এমনকি ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রেও VR সহায়ক প্রমাণিত হয়েছে।
ব্যবসা ও মার্কেটিংয়েও VR ভূমিকা রাখছে। অনেক কোম্পানি তাদের গ্রাহককে পণ্য কেনার আগেই VR এর মাধ্যমে অভিজ্ঞতা দেয়। যেমন ফ্ল্যাট বা গাড়ি কেনার আগে VR এ সেটি ঘুরে দেখা যায়। এতে গ্রাহকরা ভালোভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

সবশেষে, প্রশিক্ষণ ও গবেষণায় VR অপরিহার্য হয়ে উঠছে। সেনারা ঝুঁকি ছাড়াই ভার্চুয়াল যুদ্ধক্ষেত্রে অনুশীলন করতে পারেন। নভোচারীরা মহাশূন্যের পরিবেশে আগে থেকেই অভ্যস্ত হতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে VR সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচায়।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অসুবিধা

ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সুবিধা অসুবিধাঃ যেকোনো প্রযুক্তির যেমন ভালো দিক আছে, তেমনি খারাপ দিকও আছে। VR এর ক্ষেত্রেও তাই।
প্রথমত এটি অনেক ব্যয়বহুল। ভালো মানের VR হেডসেট আর প্রয়োজনীয় ডিভাইস কিনতে অনেক খরচ হয়। সাধারণ মানুষের পক্ষে তা সহজে কেনা সম্ভব হয় না।
শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। দীর্ঘ সময় VR ব্যবহার করলে চোখে চাপ পড়ে মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা বা বমি ভাব হতে পারে। অনেক সময় VR sickness নামের একটি সমস্যা দেখা দেয়।
দ্বিতীয়ত, অতিরিক্ত VR ব্যবহার আসক্তি তৈরি করে। বিশেষ করে তরুণরা গেম খেলায় এতটাই ডুবে যায় যে বাস্তব জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এতে পড়াশোনা ও সামাজিক জীবনে সমস্যা হয়।
গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকে। অনেক VR অ্যাপ ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করে। যদি সেই তথ্য নিরাপদ না থাকে তবে হ্যাকিং বা অপব্যবহার হতে পারে।
ভার্চুয়াল-রিয়েলিটির-সুবিধা-অসুবিধা
সবশেষে. ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সুবিধা অসুবিধাঃ সামাজিক সম্পর্ক দুর্বল হতে পারে। পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর পরিবর্তে মানুষ যদি ভার্চুয়াল জগতে বেশি সময় দেয় তাহলে সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ভবিষ্যতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি

যদিও এখন VR সবার কাছে সহজলভ্য নয়, ভবিষ্যতে এটি আরও উন্নত হবে এবং সবাই সহজেই ব্যবহার করতে পারবে। 
যেমনঃ স্কুল ও কলেজে পড়াশোনার জন্য VR বাধ্যতামূলক হয়ে উঠতে পারে।
ডাক্তাররা রোগীর চিকিৎসায় VR আরও বেশি ব্যবহার করবেন।
অফিসের মিটিং বা কাজগুলো কেবল ভিডিও কলে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং সবাই একসাথে ভার্চুয়াল রুমে বসে কাজ করতে পারবে।
মানুষ ঘরে বসেই পৃথিবীর যেকোনো দেশে ঘুরতে পারবে।
সব মিলিয়ে, VR ভবিষ্যতে মানুষের জীবনযাত্রা একেবারে বদলে দেবে।

    শেষ কথাঃভার্চুয়াল রিয়েলিটির সুবিধা অসুবিধা

    ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সুবিধা অসুবিধাঃ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি একদিকে আমাদের জীবনকে সহজ, আকর্ষণীয় ও মজাদার করছে। শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদন, ব্যবসা সব ক্ষেত্রেই এটি নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে। কিন্তু একই সঙ্গে এটি কিছু সমস্যা ও চ্যালেঞ্জও তৈরি করছে। স্বাস্থ্য সমস্যা, আসক্তি, নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং সামাজিক সম্পর্কের দুর্বলতা এসবের মধ্যে অন্যতম।
    শেষকথা হলো, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি আমাদের ভবিষ্যৎ বদলাতে পারে। তবে সেটা নির্ভর করবে আমরা কতটা দায়িত্বশীলভাবে এটি ব্যবহার করি তার ওপর। তাই VR ব্যবহার করতে হবে সীমিত ও সচেতনভাবে। এর ভালো দিকগুলো কাজে লাগাতে হবে, আর খারাপ দিকগুলো থেকে সাবধান থাকতে হবে।
    আশা করি আপনারা সবাই বুঝতে পেরেছেন VR কি?। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনাদের ভালো লাগে বা আপনারা যদি কিছু মতামত দিতে চান তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করুন এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    বারী বিডি আইটি র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

    comment url