শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে প্রতিদিন যা যা করব

 আজকের ব্যস্ত জীবনে অনেকেই শরীর ও মনকে ফিট রাখা ভুলে যায়। কম্পিউটার, মোবাইল, ভাজা খাবার,সব মিলিয়ে ক্লান্তি বাড়ে। কিন্তু প্রতিদিন মাত্র ২০ থেকে ২৫ মিনিট কিছু সহজ অভ্যাস মানলেই শরীর থাকবে শক্তিশালী ও মন হবে সতেজ।শারীরিক ফিটনেস মানে শুধু সুন্দর দেহ নয়, এটি মানসিক শান্তি, এনার্জি এবং সারাদিন সুস্থ থাকার চাবিকাঠি। জিম বা কঠিন রুটিনের দরকার নেই, ঘরেই ছোট ছোট অভ্যাসে আপনি ফিট থাকতে পারেন।
শারীরিক-ফিটনেস-বজায়-রাখতে-প্রতিদিন-যা-যা-করব
এই আর্টিকেলে আমরা জানব,কীভাবে হালকা স্ট্রেচিং, দ্রুত হাঁটা, ভালো খাবার, পর্যাপ্ত পানি, ব্যায়াম, সঠিক ভঙ্গি ও ভালো ঘুম একসাথে ফিটনেস ধরে রাখতে সাহায্য করে। সহজ, প্রতিদিন এই ছোট ছোট টিপসগুলো আপনাকে শক্তিশালী ও ভালো রাখবে।

সূচি পত্র/শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে প্রতিদিন যা যা করব

শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে প্রতিদিন যা যা করব

সুস্থ থাকতে অনেক ভারী ব্যায়াম করার দরকার নেই। প্রতিদিন সকালেই মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিট হালকা স্ট্রেচিং করলেই শরীর সক্রিয় থাকে এবং শক্তভাব কমে যায়। ঘুম থেকে ওঠার পর আমাদের শরীর একটু শক্ত পেশি টাইট এবং অলস লাগে। এই সময় সহজ কিছু স্ট্রেচিং মুভমেন্ট শরীরকে নরম করে, রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং সারা দিনের জন্য শক্তি দেয়। অনেকে এখনো মনে করেন স্ট্রেচিং শুধু ক্রীড়াবিদদের জন্য। 

আসলে যারা দীর্ঘ সময় ডেস্কে বসে কাজ করেন বা মোবাইল,কম্পিউটার বেশি ব্যবহার করেন, তাদের জন্য এটি আরও জরুরি। নিয়মিত স্ট্রেচিং করলে ঘাড় কাঁধ ও কোমরের ব্যথা অনেকটাই কমে যায়, পেশির নমনীয়তা বাড়ে এবং শরীর হালকা লাগে। স্ট্রেচিং করার সহজ কিছু পদ্ধতি স্ট্রেচিং করতে কোনো বিশেষ সরঞ্জাম লাগে না। শুধু নরম জায়গায় দাঁড়িয়ে বা বসে নিচের মতো সহজ মুভমেন্টগুলো করতে পারেন। 

যেমনঃ
  • মাথা ধীরে ডান–বামে ঘোরানো
  • দুই হাত ওপরে তুলে ধরে রাখা
  • কোমর দুদিকে সামান্য ঘুরানো
  • পা একটু ছড়িয়ে হালকা সামনে ঝুঁকে থাকা।
মনে রাখবেন কখনোই বেশি জোর দিয়ে করবেন না, সব মুভমেন্ট ধীরে ও স্বাভাবিকভাবে করতে হবে, নইলে পেশিতে টান ধরতে পারে। মানসিক চাপও কমায় স্ট্রেচিং শুধু শরীরের জন্য নয়, মনকেও শান্ত করে। সকালে কয়েকবার গভীর শ্বাস নিয়ে স্ট্রেচিং করলে মানসিক চাপ কমে, মন পরিষ্কার হয় এবং দিনটা ভালোভাবে শুরু করা যায়। ব্যস্ত মানুষদের জন্য এটি খুব সহজ ও কার্যকর অভ্যাস। অভ্যাসে পরিণত করুন প্রতিদিন অল্প সময় দিলেই স্ট্রেচিং শরীরের বড় উপকার করে। নিয়মিত করলে আপনি নিজেই বুঝবেন, শরীর হালকা লাগে, ব্যথা কমে এবং সারাদিন এনার্জি বাড়ে, তাই সুস্থ থাকতে আজ থেকেই এই ছোট ছোট অভ্যাস শুরু করুন।

সকালে ২০ থেকে ২৫ মিনিট দ্রুত হাঁটা বা হালকা দৌড়

শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে প্রতিদিন একটু হাঁটা সত্যিই অসাধারণ কাজ করে। সকালে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা বা হালকা দৌড় শরীরকে চাঙ্গা করে তোলে এবং পুরো দিনের এনার্জি বাড়ায়। হাঁটা এমন একটি প্রাকৃতিক ব্যায়াম, যা করতে আলাদা সময়, জিম বা কোনো সরঞ্জাম লাগে না শুধু ইচ্ছা থাকলেই হয়। দ্রুত হাঁটার সময় হৃদস্পন্দন বাড়ে, রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে এবং শরীরের ক্যালরি দ্রুত কমে। এজন্যই নিয়মিত হাঁটা ওজন কমাতে শরীরের ফ্যাট কমাতে এবং শরীরকে হালকা রাখতে দারুণভাবে সাহায্য করে। 

ব্যস্ত মানুষদের জন্য তো এটি অনেক বেশি সুবিধাজনক, বাসার আশেপাশের রাস্তা, ছাদ, এমনকি সামান্য খোলা জায়গাও হাঁটার জন্য যথেষ্ট। হাঁটার আরেকটি বড় উপকারিতা হলো, এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, মন ভালো রাখে এবং মানসিক চাপ কমায়। সকালে একটু হাঁটলে মুড চাঙা থাকে, কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়ে এবং সারাদিন ভালো লাগে। বিশেষজ্ঞরা বলেন যারা প্রতিদিন brisk walking করে, তারা ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারে।

অনেকে ভাবে শুধু দৌড়ালেই নাকি ফল পাওয়া যায় বিষয়টা কিন্তু পুরোপুরি ঠিক নয়,  হালকা দৌড় আর দ্রুত হাঁটা দুটোই শরীরের জন্য সমান উপকারী। তাই চাইলে আপনি দৌড়াতে পারেন, আর না চাইলে brisk walking করলেও দারুণ ফল পাবেন। সবচেয়ে বড় কথা শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটার চেয়ে সহজ কোনো অভ্যাস নেই। শুধু জুতা পরে বের হয়ে যান আর হাঁটা শুরু করুন, ছোট এই অভ্যাসই আপনার শরীরকে দীর্ঘদিন সুস্থ রাখবে।

পর্যাপ্ত পানি পান, ফিটনেস ভালো রাখার গোপন নিয়ম

শরীরকে সুস্থ রাখতে পানি খাওয়ার গুরুত্ব অনেক বেশি, কিন্তু আমরা প্রায়ই তা উপেক্ষা করি। আসলে শারীরিক ফিটনেস ভালো রাখতে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ লিটার পানি খাওয়া খুবই জরুরি। পানি শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখে, হজমকে ভালো রাখে, টক্সিন বের করতে সাহায্য করে এবং মস্তিষ্ককে সতেজ রাখে। পানি না খেলে মাথা ব্যথা, ক্লান্তি, শরীর দুর্বল লাগা বা কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস সাধারণ বা হালকা গরম পানি খেলে শরীর দ্রুত রিফ্রেশ হয়। ব্যায়ামের আগে এবং পরে পানি খেলে শরীর ডিহাইড্রেশন এড়ায়। 
অনেকেই ভুল করে চা, কফি বা ঠাণ্ডা পানীয়কেই পানি মনে করে। কিন্তু এগুলো শরীরকে আরও ডিহাইড্রেট করে, তাই এগুলো দিয়ে পানি সরবরাহ পূর্ণ হয় না। সারাদিন কাছে একটি পানি বোতল রাখুন এবং ছোট ছোট ভাগে পানি পান করতে থাকুন। এতে শরীর সবসময় হাইড্রেটেড থাকে, মানসিক চাপ কমে এবং এনার্জি লেভেলও ভালো থাকে। মনে রাখুন শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা হলো সবচেয়ে সহজ ও গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস।

পুষ্টিকর নাশতা, ফিটনেস ধরে রাখার শক্তি জোগানো খাবার

সকালের নাশতা বাদ দিলে সারাদিন শরীর দুর্বল লাগে, মনোযোগ কমে যায় আর কাজের মধ্যে উদ্যম থাকে না। আসলে শারীরিক ফিটনেস ভালো রাখতে প্রতিদিন সকালে পুষ্টিকর নাশতা খাওয়া খুবই জরুরি। নাশতায় প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার এবং হালকা ফ্যাট থাকা উচিত। যেমন ডিম, ওটস, ফল, শাকসবজি, দই, চিড়া,দুধ বা পিনাট বাটার। খালি পেটে শুধু চা বা কফি খাওয়া মানে শরীরকে খালি স্টিম দিয়ে চালানো। এতে হজমে সমস্যা হয়, শক্তি কমে যায় এবং মনোযোগও থাকে না। নাশতা খেলে সারাদিন শরীরের এনার্জি ঠিক থাকে, মনও সতেজ থাকে এবং ক্লান্তি কমে যায়। 
শারীরিক-ফিটনেস-বজায়-রাখতে-প্রতিদিন-যা-যা-করব
ওজন কমানোর বা ফিটনেস ধরে রাখার জন্যও নাশতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা ওজন কমাতে চায় তারা কখনো নাশতা বাদ দেবেন না। কারণ খালি পেটে পরের খাবারে শরীর বেশি ক্যালরি জমাতে চায়, ফলে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।তাই সকালের খাবারকে অবহেলা না করে স্বাস্থ্যসম্মত কিছু খাবার খাওয়া শুরু করুন। এটি আপনার শরীরকে শক্তি জোগাবে, মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখবে এবং শারীরিক ফিটনেস ভালো রাখতে প্রতিদিন সহজ ও কার্যকর অভ্যাস হবে।

প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ মিনিট ব্যায়াম

শরীরকে সুস্থ ও শক্ত রাখার জন্য প্রতিদিন শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে প্রতিদিন ব্যায়াম করা খুবই জরুরি। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই জিমে যাওয়ার দরকার নেই, ঘরেই হালকা ব্যায়াম করে শরীর ফিট রাখা সম্ভব। ব্যায়ামের ধরন, অনেক ধরনের হতে পারে যেমন পুশ, আপ, স্কোয়াট, প্ল্যাঙ্ক, জাম্পিং জ্যাকস, সাইক্লিং বা সহজ হাঁটা। চাইলে ২০ থেকে ৩০ মিনিটের ব্যায়ামকে ভাগ করতে পারো। উদাহরণস্বরূপ, সকালে ১০ মিনিট দুপুরে ১০ মিনিট এবং সন্ধ্যা‍য় ১০ মিনিট, এতে শরীর পুরো দিন সক্রিয় থাকে এবং ক্লান্তি কমে।

নিয়মিত ব্যায়াম করলে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়

যেমনঃ
  • পেশি শক্ত ও টান থাকে
  • শরীরের ফ্যাট কমে
  • স্ট্যামিনা বা ধৈর্য বাড়ে
  • মানসিক চাপ ও টেনশন কমে
  • ঘুম ভালো হয়
অনেকে ভাবেন ব্যায়াম মানেই কঠিন জিমের যন্ত্র। কিন্তু ভুল! বাড়িতেও সহজ ব্যায়াম করা যায়। ইউটিউবে beginner workout সার্চ করলে ঘরে বসেই ব্যায়ামের অনেক ভিডিও পাওয়া যায়। এছাড়া ব্যায়ামকে মজার করে নিতে ইসলামিক সংগীত বা পছন্দের কোন কিছু চালু করে ব্যায়াম করতে পারো। সুতরাং প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ মিনিট হালকা ব্যায়ামে অভ্যাস করলে শরীর হবে শক্তিশালী, মন ভালো থাকবে এবং শারীরিক ফিটনেস ভালো রাখতে প্রতিদিন এটি সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায় হবে।

স্বাস্থ্যকর খাবার, ফিটনেস ভালো রাখার মূল চাবিকাঠি

শরীরকে সুস্থ ও ফিট রাখতে শুধু ব্যায়ামই যথেষ্ট নয়, খাবারকেও গুরুত্ব দিতে হবে। আসলে শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে প্রতিদিন সঠিক খাবার খাওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। খাবার এমন হওয়া উচিত যা শরীরকে শক্তি দেয়, মস্তিষ্ককে সতেজ রাখে এবং পেশিকে ফিট রাখে।

যেসব খাবার, প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় থাকা উচিত

যেমনঃ
  • শাকসবজিঃ পালং শাক, লাউ, বেগুন, মটরশুঁটি, বীনস,যেকোনো সবুজ বা তাজা সবজি।
  • ফলঃ আপেল, কলা, কমলা, আম, স্ট্রবেরি,যে ফল মৌসুমে পাওয়া যায়।
  • ডালঃ মসুর ডাল, ছোলা ডাল, মুগ ডাল,যে ডালই হোক, শরীরের জন্য ভালো।
  • মাছঃ ইলিশ, রুই, স্যালমন বা ছোট মাছ,সবই পুষ্টিকর।
  • ডিমঃ সেদ্ধ বা ভাজা,ডিম হলো খুব ভালো প্রোটিন।
  • বাদামঃ কাঁচা বাদাম, কাজু, আখরোট, চিনাবাদাম,হালকা ক্ষুধায় দারুণ।
  • দুধ বা দইঃ শরীর শক্ত রাখে, হাড় মজবুত হয়।
খাবারে যত্ন নিন,পরিমাণ নয়, মান গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত ভাজা খাবার, নুডলস, জাঙ্ক ফুড বা সফট ড্রিঙ্ক নিয়মিত খেলে শরীরের ক্ষতি হয়। সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন মজা করার জন্য খাওয়া যায়, কিন্তু প্রতিদিন না খাবারকে সবসময় ব্যালান্সড রাখুন। প্লেট যেন রঙিন হয়, অর্থাৎ, বিভিন্ন রঙের সবজি ও ফল থাকা উচিত। এতে শরীরের সব অঙ্গ পুষ্টি পায়, হজম ভালো হয় এবং ফিটনেস ঠিক থাকে। এছাড়া স্বাস্থ্যকর খাবার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং সারাদিন এনার্জি রাখে।
সকালের নাশতা বা দুপুরের খাবার হালকা হলেও, যত্ন সহকারে নেওয়া উচিত। মনে রাখুন শরীরকে শক্তি দেওয়া মানেই ফিটনেস বজায় রাখা। তাই প্রতিদিন খাবারে যত্ন নিন, প্লেটের খাবার রঙিন করুন এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের অভ্যাস করুন। এই ছোট অভ্যাসগুলো নিয়মিত করলে দেখতে পাবেন, শরীর হালকা, মন ভালো, এবং শারীরিক ফিটনেস ভালো রাখতে প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর খাবার সবচেয়ে কার্যকর এবং সহজ নিয়ম।

দুপুরে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট বিশ্রাম, শরীর ও মনকে রিফ্রেশ করার ট্রিক

শরীর ও মনকে শক্তি রাখার জন্য দুপুরের সময় একটু বিরতি নেওয়া খুব জরুরি। অনেকেই মনে করে কাজ বা ব্যস্ততার কারণে দুপুরে বিশ্রাম নেওয়া যাবে না, কিন্তু শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ মিনিট চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকা বা হালকা বসে বিশ্রাম নেওয়া শরীরের জন্য অনেক উপকার। দুপুরে হালকা বিশ্রাম নেওয়ার সময়, শুধু শরীর নয় মনও বিশ্রাম পায়। এতে সারাদিনের ক্লান্তি কমে, মানসিক চাপ দূর হয়, এবং বাকি দিনের কাজের জন্য ফোকাস বাড়ে। 

যেমন যদি দীর্ঘ সময় কম্পিউটার বা মোবাইলের সামনে বসে কাজ করে থাকো, কিছুক্ষণের জন্য চোখ বন্ধ করা এবং পেশি শিথিল করা যথেষ্ট। এছাড়া এই সময় কয়েকটি গভীর শ্বাস নিলে রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। ফলস্বরূপ মনও সতেজ থাকে এবং শরীর নতুন করে এনার্জি পায়। যারা অফিসে বা স্কুলে বসে কাজ করেন, তারা চাইলে অফিসের চেয়ার বা ডেস্কে বসে বা নিজের কক্ষে হালকা শুয়ে বিশ্রাম নিতে পারেন। 

দুপুরের এই ছোট্ট ব্রেক শুধু শরীরকে নয়, মানসিক অবসাদও কমায়। খাবারের পরে ৫ থেকে ১০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করলে হজমও ঠিক থাকে। এছাড়া শরীরকে ছোট ছোট বিরতি দিলে দিনের শেষ পর্যন্ত ক্লান্তি খুব কম লাগে। সুতরাং প্রতিদিন দুপুরে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট নিজের জন্য সময় বের করুন। চোখ বন্ধ করুন, হালকা শ্বাস নিন, কিংবা শুধু বসে থাকা বা হালকা হালকা স্ট্রেচিং করুন। মনে রাখবেন শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে প্রতিদিন ছোট্ট এই ব্রেক খুব সহজ ও কার্যকর অভ্যাস।

বিকেলে হাঁটা বা হালকা এক্টিভিটি, সারাদিনের ক্লান্তি দূর করার সহজ উপায়

দুপুরের কাজ শেষ হলেও শরীর তখনও ক্লান্ত থাকে। সারাদিনের শক্তি ধরে রাখতে এবং মনকে সতেজ রাখার জন্য বিকেলে হালকা হাঁটা বা ছোট্ট এক্টিভিটি খুব জরুরি। আসলে শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে প্রতিদিন বিকেলে ২০ থেকে ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করা সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকর অভ্যাস। বিকেলে হাঁটার সময় শুধু শরীরের পেশি সক্রিয় হয় না, বরং মানসিক চাপও কমে যায়। এই সময় আপনি ইসলামিক সংগীত শুনতে পারেন, বন্ধু বা পরিবারকে ফোন করতে পারেন বা প্রকৃতির মধ্যে হেঁটে মানসিক শান্তি পেতে পারেন। 

যারা অফিসে বসে কাজ করেন, তাদের জন্য এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার ফলে পেশি শক্ত হয়ে যায়, রক্ত সঞ্চালন ধীর হয়ে যায়। হাঁটা বা হালকা এক্টিভিটি এটি ঠিক রাখতে সাহায্য করে। হাঁটার বা হালকা ব্যায়ামের আরেকটি সুবিধা হলো ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করা, হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখা এবং স্ট্যামিনা বাড়ানো। বিকেলে যদি হাঁটতে না পারো,তবে লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি ওঠা, ডান,বাম দিকে হালকা স্ট্রেচিং বা ছোট ছোট স্কোয়াট করাও কার্যকর।

সারাদিনের ক্লান্তি দূর করার জন্য বিকেলে ২০ থেকে ৩০ মিনিটের হালকা এক্টিভিটি শুধু শরীরকে নয়, মনকেও সতেজ রাখে। দিনশেষে ঘুমও ভালো হয় এবং রাতের খাবার হজম হয় সহজে। তাই প্রতিদিন বিকেলে নিজেকে একটু সময় দাও,হাঁটা বা হালকা এক্টিভিটি করো। মনে রাখো, শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে প্রতিদিন বিকেলের এই অভ্যাস তোমার শরীরকে দীর্ঘদিন ফিট রাখবে।

সঠিক ভঙ্গিতে বসা, কোমর ও ঘাড়কে বাঁচানোর সহজ ট্রিক

আজকাল আমরা অনেকেই দীর্ঘ সময় কম্পিউটার বা মোবাইলের সামনে বসে থাকি। এই অভ্যাস পেছনের পেশি শক্ত, কোমর ও ঘাড়ে ব্যথা সৃষ্টি করে। তাই শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে প্রতিদিন সঠিক ভঙ্গিতে বসা খুবই জরুরি। সঠিক ভঙ্গি মানে পেছন সোজা রাখা, কাঁধ ঝুঁকে না রাখা, পা সমানভাবে মাটি স্পর্শ করা এবং কম্পিউটার বা মোবাইল চোখের লেভেলে রাখা। অনেক সময় মানুষ চেয়ারে ঢলে বসে বা কুঁজো হয়ে থাকে। এতে শুধু ব্যথাই নয়, হজমেও সমস্যা হয় এবং সারাদিন ক্লান্তি বেশি থাকে। ভঙ্গি ঠিক করার ছোট্ট ট্রিক, প্রতি ঘন্টায় ২ থেকে ৩ মিনিট দাঁড়িয়ে দাঁড়ানো বা হালকা স্ট্রেচ করা। 

অফিসে থাকলে চেয়ার সামান্য পিছনে ঠেলেও কাজ চলে। এছাড়া ঘাড় ও কোমরের ব্যথা কমাতে ছোট ছোট ঘূর্ণন বা হাত,পা মুভমেন্ট করাও খুব কার্যকর। সঠিক ভঙ্গিতে বসার আরেকটি সুবিধা হলো শরীরের রক্তসঞ্চালন ঠিক থাকে, মনও সতেজ থাকে এবং পেশি শক্ত থাকে। বিশেষ করে যারা দীর্ঘক্ষণ কাজ করেন, তাদের জন্য এটি একধরনের ফ্রি জিম। তাছাড়া সঠিক ভঙ্গি শিশুদেরও শেখানো উচিত। ছোটবেলা থেকে ঠিকভাবে বসার অভ্যাস থাকলে বড় হয়ে কোমর বা ঘাড়ের সমস্যা অনেক কম হয়।  

মনে রাখবেন প্রতিদিন শুধুমাত্র সঠিক ভঙ্গিতে বসলেও শরীর অনেক ফিট থাকে। তাই দীর্ঘক্ষণ কাজের সময় নিজেকে মনে করিয়ে দিন, সোজা বসুন, কাঁধ ছেড়ে রাখুন, পা ঠিক রাখুন। ছোট অভ্যাস কিন্তু উপকার বিশাল। শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে প্রতিদিন সঠিক ভঙ্গিতে বসা অভ্যাস করুন এবং দেখুন ব্যথা কমছে, মন ভালো, সারাদিন শক্তি বাড়ছে। সঠিক ভঙ্গিতে বসা, কোমর ও ঘাড়কে বাঁচানোর সহজ ট্রিক।

মোবাইল, ল্যাপটপ কম ব্যবহার করা, ঘাড় ও চোখকে বিশ্রাম দেওয়ার সহজ উপায়

আজকাল আমরা সবাই মোবাইল বা ল্যাপটপে অনেক সময় ব্যয় করি। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ এগুলো ব্যবহার করলে ঘাড়, কাঁধ ও চোখে সমস্যা হতে পারে। তাই শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে প্রতিদিন মোবাইল,ল্যাপটপ ব্যবহার সীমিত করা খুবই জরুরি। যারা সারাদিন কম্পিউটার বা মোবাইলে কাজ করেন, তাদের পেছনের পেশি শক্ত হয়ে যায়, ঘাড় ব্যথা করে এবং চোখ ক্লান্ত হয়। অনেক সময় আমরা বুঝতেও পারি না যে আমাদের শরীর অতিরিক্ত চাপের মধ্যে আছে। মোবাইল বা ল্যাপটপ কম ব্যবহার করলে শরীর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে, পেশি শিথিল হয়, চোখের ক্লান্তি কমে এবং মনও শান্ত থাকে।

ছোট্ট ট্রিক, প্রতি ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর চোখ বন্ধ করে বা সামান্য ঘুরে দাঁড়ানো। ল্যাপটপ বা ডেস্কের স্ক্রিন চোখের লেভেলে রাখুন, খুব নিচে বা উপরে না। মোবাইল ব্যবহার করলে হাতে ধরে চোখের লেভেলে রাখা ভালো, নইলে ঘাড় নিচু হয়ে যায়। বাড়িতে বা অফিসে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার কমাতে পারেন। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা ইউটিউব মাঝে মাঝে চেক করলেও সমস্যা নেই, কিন্তু সারাদিন ধরে স্ক্রিনে চোখ রাখলে ক্ষতি হয়। বিকল্প, সকালে বা রাতে সীমিত সময় স্ক্রিন ব্যবহার করুন।

মনে রাখবেন, ঘাড়,কাঁধে ব্যথা কমাতে, চোখ ভালো রাখতে এবং মন সতেজ রাখার জন্য স্ক্রিন টাইম কমানো কার্যকর। এই ছোট অভ্যাস প্রতিদিন করলে শরীর দীর্ঘদিন ফিট থাকে। সংক্ষেপে, শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে প্রতিদিন মোবাইল,ল্যাপটপ কম ব্যবহার করা খুবই সহজ ও গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস। ছোট্ট অভ্যাস, কিন্তু উপকার বিশাল। মোবাইল, ল্যাপটপ কম ব্যবহার করা, ঘাড় ও চোখকে বিশ্রাম দেওয়ার সহজ উপায়

মন ভালো রাখা ও পর্যাপ্ত ঘুম, ফিটনেসের শেষ চাবিকাঠি

শরীরকে সুস্থ ও ফিট রাখতে শুধু ব্যায়াম বা স্বাস্থ্যকর খাবারই যথেষ্ট নয়, মনকে ভালো রাখা এবং পর্যাপ্ত ঘুমও খুব জরুরি। আসলে শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে প্রতিদিন মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া ও ঠিকমতো ঘুমানো সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকর উপায়। যদি মন খারাপ বা স্ট্রেসড থাকে, শরীর ক্লান্ত লাগে, পেশি শক্ত হয় এবং সারাদিনের শক্তি কমে যায়। তাই ছোট ছোট সময় নিজের জন্য নিন,গভীর শ্বাস নিন, প্রিয় প্রিয় ইসলামিক গান শুনুন, হালকা হাঁটাহাঁটি করুন বা কয়েক মিনিট ধ্যান করুন, মন ভালো থাকলে শরীরও ভালো থাকে।
শারীরিক-ফিটনেস-বজায়-রাখতে-প্রতিদিন-যা-যা-করব
পর্যাপ্ত ঘুম মানে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা। কম ঘুমে শরীর ঠিকমতো রিকভারি পায় না, মানসিক চাপ বাড়ে, মুড খারাপ থাকে এবং ফিটনেসে প্রভাব পড়ে। সকালে ওঠা ও সারা দিন এনার্জি রাখার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছোট ট্রিক, ঘুমের আগে ফোন বা কম্পিউটার ব্যবহার কমান। আলোর পরিমাণ কমিয়ে শুয়ে পড়ুন। ঘুমের সময় একই সময়ে ওঠার অভ্যাস রাখলে শরীর ঠিক থাকে। এতে ডায়জেশন ঠিক থাকে, ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং শরীর সুস্থ থাকে।

এক কথায় মন ভালো রাখা ও পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের জন্য যেমন শক্তির উৎস, ঠিক তেমনি ফিটনেস বজায় রাখার চাবিকাঠি। যদি এই দুটি অভ্যাস নিয়মিত চালু থাকে, দেখবেন সারাদিন শরীর হালকা, মন সতেজ এবং শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে প্রতিদিন সহজ হয়ে যায়। মন ভালো রাখা ও পর্যাপ্ত ঘুম, ফিটনেসের শেষ চাবিকাঠি

রাতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম, ফিটনেসের জন্য সবচেয়ে জরুরি

শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং শক্তিশালী রাখার জন্য শুধু ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাবার বা পানি খাওয়াই যথেষ্ট নয়। রাতে পর্যাপ্ত ঘুম নেওয়াও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আসলে শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম অপরিহার্য। পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে রিচার্জ করে, দিনের ক্লান্তি দূর হয়, পেশি শক্ত হয়, মস্তিষ্ক সতেজ থাকে এবং হরমোন ঠিকভাবে কাজ করে। ঘুম না হলে শুধু মন খারাপ হয় না, বরং শরীর ও দুর্বলও হয়ে যায়। অনেক সময় মানুষ কম ঘুমের কারণে মোটা হয়ে যায়, মাথা ব্যথা হয় বা সারা দিন ক্লান্ত থাকে।

ঘুমের সময় শরীরের পেশি নিজেই রিকভারি নেয়। যারা নিয়মিত ব্যায়াম করে, তাদের পেশির শক্তি বাড়াতে ঘুম খুবই দরকার। এছাড়া ভালো ঘুম মানসিক চাপ কমায় এবং সারাদিন মন ভালো রাখে। ছোটদের জন্য এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাদের বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য। ছোট ট্রিক রাতের ঘুমের আগে ফোন, কম্পিউটার বা টিভি কম ব্যবহার করুন। ঘরের আলো একটু কমিয়ে শুতে যান। চেষ্টা করুন প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং একই সময়ে ওঠার। 
এতে শরীরের রিদম ঠিক থাকে, হজম ভালো থাকে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। মনে রাখবেন রাতের ভালো ঘুম হলো শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে প্রতিদিন সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকর উপায়। ছোট অভ্যাস, কিন্তু উপকার বিশাল। ৭,৮ ঘণ্টা ঘুম শরীরকে ভালো রাখে, মনকে চাঙ্গা রাখে এবং সারাদিন শক্তি জোগায়। তাই সুস্থ ও ফিট থাকতে রাতে ভালো ঘুমকে কখনো উপেক্ষা করবেন না। রাতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম ফিটনেসের জন্য সবচেয়ে জরুরি

শেষ কথা/শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে প্রতিদিন যা যা করব

সুস্থ থাকা আসলে কোনো কঠিন কাজ নয়,এটি ছোট ছোট অভ্যাসের নিয়মিত চর্চা মাত্র। প্রতিদিন মাত্র কয়েক মিনিট হাঁটা, সামান্য স্ট্রেচিং, পর্যাপ্ত পানি, সঠিক খাবার, স্ক্রিন টাইম কমানো, মন ভালো রাখা আর রাতে ভালো ঘুম,এই সাধারণ অভ্যাসগুলোই ধীরে ধীরে তোমার শরীর ও মনকে বদলে দিতে পারে। ফিটনেস মানে জিমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটানো নয়,ফিটনেস মানে নিজের প্রতি একটু যত্নশীল হওয়া।  ব্যস্ত জীবন, কাজের চাপ, সারাদিনের দৌড়ঝাঁপ, এসবের মাঝেও যদি প্রতিদিন নিজের জন্য সামান্য সময় রাখো, একদিন দেখবে ক্লান্তি কমছে, মন ভালো থাকছে, শরীর হালকা লাগছে আর জীবনটাকেই নতুন মনে হবে। 

মনে রাখো শরীরই তোমার আসল সম্পদ। আজ একটা ছোট পদক্ষেপ, কাল আরেকটা, এভাবেই তোমার সুস্থ জীবনের পথ তৈরি হবে। তাই দেরি না করে আজ থেকেই নতুন অভ্যাস শুরু করো, নিজেকে ভালো রাখো, নিজের শরীরকে গুরুত্ব দাও। এই আর্টিকেলে শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখতে প্রতিদিন যা যা করব, পড়ে যদি আপনাদের ভালোলাগে তাহলে অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাবেন এবং আমার এই আর্টিকেলটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বারী বিডি আইটি র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url